অনলইন শপের বাজার প্রতিদিন বড় হচ্ছে, প্রতিনিয়ত ক্রেতা এবং বিক্রেতা বাড়ছে। নতুন নতুন সেবাও যুক্ত হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।
গত বছরও যেখানে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারের মতো অর্ডার হতো, এখন সেটা উঠে এসেছে ৩০ হাজারের কাছাকাছি। উৎসব পার্বনের আগে দৈনিক অর্ডারের এই অংক ৫০ হাজারের কাছাকাছি চলে যায়। সামনে আসছে পহেলা বৈশাখ; তারপর ঈদ – তখন হয়তো দিনে অর্ধলক্ষ অর্ডার হবে বা তার চেয়েও ঢের বেশী। এটি অবশ্যই অনেক বড় একটা অংক।
ডিজিটাল কমার্সের বড় বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে বা ই-কমার্স নিয়ে দেশে যারা গবেষণা করছেন তাদের সঙ্গে আলাপে জেনেছি একেকটি অর্ডারে গড়ে আটশ থেকে এক হাজার টাকা মূল্য মানের পন্য থাকে। সেই হিসেবে বছরে এই খাতের লেনদেন দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার মধ্যে।
এই অংক আরো বেশীও হতে পারে, এবং এটি নিয়ে বিতর্কে যাচ্ছি না। আমার বক্তব্য হল, সব মিলে একটা ভালো সময়ের মধ্য দিয়ে ই-কমার্সের যাওয়ার কথা। সেই ইঙ্গিতই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা কি বলছে, আসলেই কি ভালো কিছু বা বড় কিছুর ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে? উত্তর অবশ্যই এক শব্দে ‘হ্যাঁ’ বলে দেওয়া যাচ্ছে না।
আমিও নিদ্বিধায় ‘হ্যাঁ’ বলতে পারলে সবচেয়ে খুশি হতাম। কিন্তু সেটা যে বলতে পারছি না। আপনারাও দ্বিধাহীন ‘হ্যাঁ’ বলতে পারবেন না বলেই মনেকরি। ‘হ্যাঁ’ বলতে হলেও আগে পিছে নানা রকম ভেবে, মাথা চুলকে তারপর মাঝামাঝি একটা কিছু বলতে হবে।
এ বিষয়ে দুটি তাৎপর্যময় ঘটনা বলি।
এক. সম্প্রতি ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা অনুমোদন করেছে সরকার। দুই. ফেসবুক বা অন্য মাধ্যমে অনলাইন প্লাফর্মগুলোর বিজ্ঞাপন বাবদ লেনদেন কিভাবে হচ্ছে সেটি যাচাইয়ে নেমেছে পুলিশের মানিলন্ডারিংয়ের তদন্ত দল। এই দুটি কারণেই দ্বিধাহীন ‘হ্যাঁ’ এখন দ্বিধাযুক্ত ‘হ্যাঁ’ হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়ে আগে বলি। আগেই বলেনেই, আমি এই তদন্তের বিরোধী নই, বরং পক্ষে। অবশ্যই দেশে ব্যবসা করতে হলে দেশের আইন-নিয়ম-নীতি মেনেই ব্যবসা করতে হবে। তবে এই বক্তব্যের সঙ্গেও একটা ‘তবে’ আছে। কেউ যেন অহেতুক ঝামেলায় না পড়েন।
সিআইডি ইতিমধ্যে বড় দশটি ডিজিটাল সেবাদাতা কোম্পানির কাছ থেকে তাদের ফেসবুক বা অন্য সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের অংক জেনে নিয়েছে। এখন সেটি ধরে তদন্ত হবে, হোক সেটা।
আমরা যতোদূর জানতে পেরেছি কোম্পানিগুলো হল – রকমারি ডটকম, আজকের ডিল, দারাজ ডটকম, ফুডপান্ডা, খাশফুড, অথবা ডটকম, বিক্রয় ডটকম, চালডাল ডটকম, পিকাবো এবং সেবা ডট এক্সওয়াইজেড।
এগুলো সবাই মোটামুটি বড় কোম্পানি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে যাদের নাম এসেছে এর চেয়েও বড় কোম্পানি কিন্তু বাদ পড়ে গেছে। তারা এই তালিকায় না থাকলে বিষয়টি বিতর্কমুক্ত হচ্ছে না।
নিয়ম মেনে ব্যবসা করার পক্ষে স্লোগান দিয়েও প্রশ্ন রাখতে চাই এই তদন্তের ধাক্কা যে খাতটির ওপরে পড়ছে না সে কথা – এমন কি কেউ আছেন যে জোর গলায় দাবি করতে পারবেন? পারবেন না। আমিও পারছি না।
এবার প্রথম বিষয়টিতে কথা বলি। ডিজিটাল কমার্সের ওপর যে নীতিমালা জারি করা হয়েছে সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি কোন বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশে ডিজিটাল সেবার ব্যবসা করতে চাইলে তার মূলধন ৪৯ শতাংশের বেশী হতে পারবে না।
এটা কতোটা ভালো কি খারাপ সেটা যাচাইয়ের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি না। কিন্তু যেখানে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই সেটা হল, শতভাগ মালিকানার বিদেশী ব্যাংক রাখবেন, শতভাগ মালিকানার বিদেশী মোবাইল ফোন অপারেটর রাখবেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার ক্ষেত্রেও কারো কোনো সমস্যা নেই, এমনকি এগুলো সব ডিজিটাল সেবা হওয়ার পরেও, সব সমস্যা কেবল অনলাইন শপের ক্ষেত্রে?
দেশীয় মালিকানার অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যে শতভাগ বিদেশী পন্য বেচছেন তাতে সমস্যা হচ্ছে না?
আবার স্ববিরোধীতাটা দেখেন, সরকার বিদেশী কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্যে অনুনয় বিনিময় ধরছে। এখন যারা সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে এখানে ই-কমার্সে বিনিয়োগ করল তারা কি দোষটাই না করল যে এখন তাদের শেয়ার ছেড়ে দিয়ে ভেগে যেতে হবে? তাহলে এই যে এতো টাকার বিনিয়োগ সেটার কি হবে?
গলদের প্রশ্নটা এখানেই। এই কারণেই আমাদেরকে কেউ বিশ্বাস করে না।
বিশেষ, বিশেষ কাউকে সুবিধা দিতেই নাকি আবার নীতিমালার মধ্যে শুরুতেই এমন বিতর্কিত এবং একই সঙ্গে স্ববিরোধী বিষয় টেনে আনা হল?-এমন প্রশ্ন যদি কেউ করেন তাহলে কি তিনি খুব একটা অন্যায় প্রশ্ন করবেন?
আবার অন্যদিকে প্রশ্ন আসছে আলিবাবা বা অ্যামাজান যখন বাজারে আসবে তখন কি আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে লড়াই করে টিকতে পারবে? কাজ করতে হবে এই প্রশ্ন নিয়েও।
কিন্তু আমার পয়েন্টা ছিল সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেখানে দুটো দিকই দেখছি। মানুষ যেমন আরো আরো বেশী অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আসবে তার নিত্য প্রয়োজন মেটাতে একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাও করতে হবে উদ্যোক্তাদের।
সংবাদ নিয়ে আলোচনা