নিউজইশপ রিপোর্ট: চলতি বছরের প্রথম আট মাসে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে তিন লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকার বেশী। লেনদেনের এই অংকে চোখ কপালে উঠে গেলেও এই পদ্ধতির লেনদেনে ধারাবাহিকতা অভাব সুস্পস্ট।
লেনদেনের অংক জুলাইতে ৬২ হাজার ৯৯৯ কোটি পেরিয়ে গেল তো আগস্ট মাসেই সেটা নেমে গেল সাড়ে ৪১ হাজার কোটির নীচে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার যে ডেটা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট মাসে সব মিলে ৪১ হাজার ৪০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার লেনদেন করেছে ১৫টি ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা প্রতিষ্ঠান। দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার একটু বেশী। জুলাই মাসেও সেটি ছিল দৈনিক দুই হাজার ৩২ কোটি টাকার ওপরে।
সেবা দাতা সংস্থাগুলো বলছে, যে কোনো ঈদের ঠিক পরের মাসের জন্যে এটি স্বাভাবিক ঘটনা।
ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, যে কোনো লেনদেনের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়ে আসছে সব সময়, এমএফএস তার ব্যতিক্রম নয়।
মিশুক বলেন, ঈদের আগে জুলাই মাসে বেতন-বোসান এবং অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রে বড় লেনদেন হয়েছিল। সেটা অনেকটাই কমে গেছে আগস্ট মাসে। তাছাড়া সরকারি লেনদেনও এসময় খুব কম হয়েছে। একইভাবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ব্যবহার করে গ্রামে আত্মীয়-পরিবারের কাছে টাকা পাঠানোর হারও বেশী ছিল। তাছাড়া জুলাইয়ে ‘নগদ’ এর মাধ্যমে কোরবানীর পশু পর্যন্ত কেনা হয়েছে। সব মিলে জুলাইয়ে অংকটা অনেক বড় থাকলেও আগস্টের লেনদেনে বড় পরিবর্তন চোখে পড়ছে।
মোট লেনদেন কম হওয়ায় ক্যাশ-ইন কম হয়েছে, ক্যাশ-আউটও আগের চেয়ে কম হয়েছে।
তবে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা লেগেছে সরকারি পেমেন্টের ক্ষেত্রে। এখানে এক মাসেই ৯৮ শতাংশের বেশী পতন হয়েছে। জুলাইয়ে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার মাধ্যমে সরকারি লেনদেন হয়েছে যেখানে এক হাজার ৭৭ কোটি টাকা; সেখানে আগস্ট মাসে সেটি চলে এসেছে মাত্র ১৪ কোট ৯৭ লাখ টাকায়।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকার বেতন ভাতা যাচ্ছিল মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার মাধ্যমে। জুলাইয়ে এই অংক ছিল প্রায় ৪,৬০০ কোটি টাকা। আর আগস্টে সেটি নেমে আসে মাত্র এক হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
এই সময়ে মোট নিবন্ধিত গ্রাহক সংযোগ বাড়লেও অ্যাকাউন্টের ব্যবহার কমেছে। সে কারণে জুলাইতে চার কোটি ২৭ লাখ সংযোগ এমএফএস সেবা ব্যবহার করলেও আগস্টে সেটি চার কোটি ৬ লাখে এসে দাঁড়িয়েছে।
দেশের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সেপ্টেম্বরের রিপোর্ট যখন আসবে তখন আবার দেখা যাবে অনেক কিছুই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বরে ‘নগদ’ অনেকগুলো নতুন সুবিধা গ্রাহকদের জন্যে চালু করেছে। তাছাড়া অক্টোবরের শুরু থেকে ‘নগদ’ গ্রাহকদের ক্যাশ-আউট চার্জ দেশে প্রথমবারের মতো এক হাজার টাকায় ৯ দশমিক ৯৯ টাকা করা হয়েছে। ফলে অক্টোবরে এমএফএস এর মাধ্যমে লেনদেনে বড় রকমের জাম্প হবে-বলছিলেন মিশুক।
রিপোর্ট অনুসারে, আগস্ট মাসে একমাত্র বিল পেমেন্ট খাতে আগের মাসের তুলনায় লেনদেনের অংকটা বাড়লও আর সব খাতে এটি কমেছে।
মিশুকের মতোই অন্যান্য এমএফএস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন এমএফএস এর মাসিক বাজার মূল্য ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। ঈদের পরের মাসের কারণে এটি সামান্য নীচে নেমে গেছে। যেটি খুব দ্রুতেই ফিরে আসবে।
সংবাদ নিয়ে আলোচনা