শেষ পর্যন্ত সব ভয়, নিয়ম ভেঙে, মাস্ক, গ্লোভস পরে হাজির হলাম কাওরান বাজারের স্বাস্থ্য বাতায়নের অফিসে। এটা গত পরশুর কথা (২০ এপ্রিল)।
এমন একটা সময়ে এমন অদ্ভূত একটা মানুষ ভর্তি অফিস, দৃশ্য’টা কেমন যেন পরাবাস্তব। সারি সারি লম্বা টেবিল ভর্তি কম্পিউটার।
প্রতিটা কম্পিউটারের সামনে একজন করে নারী অথবা পুরুষ ডাক্তার-মাথায় ক্যাপ, মুখে মাস্ক, হাতে গ্লোভস আর কানে নয়েস ক্যান্সেলিং হেডফোন লাগিয়ে অনবরত কথা বলছেন আর কম্পিউটারে টাইপ করে যাচ্ছেন।
এক সেকেন্ডেরও ফুরসত যেন নেই কারো। কথা শেষ হলেই আবার প্রেস্ক্রিপশন লিখে সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দিতে হবে রোগীদের ফোন নম্বরে।
এইভাবে প্রতিদিন স্বাস্থ্য বাতায়নের ডাক্তার যোদ্ধারা, দেশের এই দুঃসময়ে, ৭০ হাজার মানুষের সমস্যার কথা শোনে, তাদের সমস্যার সমাধান দেন এবং যাদের ওষুধের প্রয়োজন তাদেরকে পাঠিয়ে দেন রোগ মাফিক ওষুধের প্রেসক্রিপশন।
ভাবতে পারেন, আমরা যখন ঘরে বসে, হাত ধুয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছি আর সরকারের গুষ্টি উদ্ধার করছি, ঠিক তখন কিছু আলোকিত মানুষ দেশের জন্য রাত-দিন ২৪ ঘন্টা কাজ করে যাচ্ছেন।
আমাদের মতো দেশে টেস্ট কিট, টেস্ট কিট করে গলা ফাটিয়ে ফেললেও কোন লাভ হবে না কিংবা গলা ফাটানোর কোন প্রয়োজনও নেই।
স্বাস্থ্য বাতায়ন কিন্তু এই রকম হাজার হাজার টেস্ট আসলে রোজ করছে। শুধু তাই নয়, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম, কিভাবে আমাদের এক তরুণী ডাক্তার এক এক পাগল্ প্রায় মাকে শান্ত করছেন। গত দুই দিন ধরে তার ১০ বছরের মেয়ে কিচ্ছু খাচ্ছে না।তার উপর তার সর্দি এবং হালকা জ্বর। দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মা ফোন করলেন স্বাস্থ্য বাতায়ের অফিসে।
আমাদের তরুণ ডাক্তার কি সুন্দর মাথা ঠান্ডা করে মায়ের মতো সব কিছু চেক করে, প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানোর কথা বলে, সেই মা’কে শান্ত করলো এই বলে যে, তার মেয়ে করোনা সংক্রমন হয়নি।
আমি মনে মনে বললাম, ‘সাবাশ মেয়ে, তুমি থাকতে আমাদের কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।’
কথা হলো দুই মহা ওস্তাদের সঙ্গে-নিজাম ভাই আর সোহরাব ভাই এর সঙ্গে। এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলেন সোহরাব ভাই আর রুপায়ন ভাই আর এখন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দলে যোগ দিয়েছেন নিজাম ভাই।
স্বাস্থ্য বাতায়ন সরকারের সবচেয়ে বড় ভার্চুয়াল হাসপাতাল। বাংলাদেশের যেকোন কোনা থেকে যে কেউ ১৬২৬২ শর্টকোডে ফোন করে কথা বলতে পারেন। এত্তো কল আসছে প্রতিনিয়তো অথচ তাদের য়েটিং টাইম সবচেয়ে ব্যস্ত সময়েও চার মিনিটের বেশি না।
একটা ছোট ইউনিট আছে যারা মানসিক স্বাস্থ্যেরও সমাধান দেয়।
প্রায় দেড় ঘন্টা ছিলাম ওখানে। আসতে মন চাচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো এই মহান মানুষগুলোর সঙ্গে থাকলেও একটু পূণ্য বাড়বে।
অফিসটাতে ঢুকেছিলাম এক মানুষ হয়ে, আর বের হলাম একদম অন্য মানুষ হয়ে। আমি এখন নিশ্চিত কোরোনা আমাদেরকে কোনভাবেই হারাতে পারবে না। আমরা যতই ঘরে বসে দুশ্চিন্তা করে, দেশের, ডাক্তারদের, সরকারের কিংবা আইইডিসিআর এর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করি না কেন, তারা এইগুলাতে খুব একটা কান দেন না। কারণ তারা জানেন তাদের আরো কাজ করতে হবে আমাদের জন্য। ভাগ্যিস তারা আমাদের কথায় কান দেন না।
লেখাটি গ্রে ঢাকা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাউসুল আলম শাওন ফেসবুক থেকে নেওয়া।
সংবাদ নিয়ে আলোচনা