রাকিব খান :
এই তো মাত্র কিছুদিন আগেও পাঠাও ছিল বাংলাদেশের সবার কাছে আইডল। আর এখন সোস্যাল মিডিয়া খুললেই দেখি বদনাম আর বদনাম। আমি সত্যিকার অর্থে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি যারা অকালে পাঠাও থেকে চাকরি হারিয়েছেন তাদের জন্যে। প্রত্যাশা করি খুব দ্রুত তাদের নতুন কর্মসংস্থান হয়ে যাক।
মোটা দাগে এই অবস্থানের পরেও বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু কথা বলতে চাই। কেউ বিকল্প ভাবনা পেলেও পেতে পারেন।
প্রথম কথা হল, একটা কোম্পানির মূল চালিকা শক্তি হল তার রেভিনিউজ বা আয়। এখন যারা পাইকারি হারে পাঠাওয়ের সমালোচনা করছেন তারা ঢাকায় রাইড শেয়ার সার্ভিস নেওয়ার সময় কয়বার উবার ব্যবহার করেছেন আর কয়বার পাঠাও ব্যবহার করেছেন? একটু চিন্তা করলেই কিন্তু আপনাদের নিজেদের সমালোচনার অনেক উত্তর পেয়ে যাবেন। ফুড ডেলিভারির বিষয়েও একই প্রশ্ন রাখলাম।
দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি হল এবার যারা পাঠাও ব্যবহার করেছেন কিন্তু আশানুরূপ সার্ভিস পায়নি বলে এখন অভিযোগ করছেন তারা একবার চিন্তা করে দেখেন যাদের চাকরীচ্যুত করা হয়েছে তারাই কিন্তু আপনাদের সার্ভিস দিয়েছেন; যা আপনাদের কাছে আশানুরূপ ছিল না।এর মানে কিন্তু আবার এই নয় যে আমি বিনা নোটিসে চাকুরীচ্যুতকে সমথর্ন করছি-কিন্তু এটাও তো ঠিক যারা গুনগত সেবা দিতে পারেনি বলে আপনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তাদেরিই চাকরি গেছে।
আমার প্রস্তাবনার তৃতীয় পয়েন্টটিতে সম্মানের সাথে জানতে চাচ্ছি যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষজ্ঞ হিসাবে এখন মতামত দিচ্ছেন দয়া করে তারা কি একবার আমাদের জানাবেন আপনারা বাস্তব জীবনে কয়টা স্টাটআপ দাঁড় করাতে পেরেছেন? পাঠায়ের সমালোচনা করা তো অনেক সহজ, কিন্তু কাজ করে একটা পাঠাও দাঁড় করানো অনেক কঠিন। “সাকিবের বউ হাফপ্যান্ট পরছে, এইজন্য সাকিব সেঞ্চুরি করতে পারে নাই” – এই সমালোচনার মানসিকতা থেকে আমাদরেকে বের হয়ে আসতে হবে। আপনার বউকে হাফ প্যান্ট না পরাইতে পারার আক্ষেপ সাকিবের উপর আর কত ঢালবেন?
এবার আমি পশ্চিমা দেশের একটি উদাহরণ তুলে আনতে চাই। আমি যেখানে বাস করছি এখানে প্রতিক্ষণে সব চাকুরীজীবি টেনশন করে কাল পযন্ত চাকরি থাকবে তো? উচ্চপদস্থরা ‘স্টেস রিলিফ পিল’ খেয়ে ঘুমাতে যান। মার্কেট শেয়ার এক শতাংশ কমে গেছে তো পরদিনই বিনা নোটিসে চাকরি নাই। মনপুত না হলে অনেকেই কোর্টে যায়। যদিও ইন্সুইরেন্স থাকে, সমাজসেবা ভাতা, ইত্যাদি থাকে সুতরাং তারা একটা সেফগার্ডের মধ্য দিয়ে যায়। তারপরেও কিন্তু তেমন কাউকে আমি পাইনি যে কিনা ছেড়ে যাওয়া কোম্পানীর নেগেটিভ প্রচারণা করতে শুরু করে। আমরা পাঠাও নেগেটিভ প্রচারণা করে বাইরের কর্পোরেট কোম্পানিগুলো সুবিধা করে দিচ্ছি না তো? পরে আবার রে-রে-রে করবো না তো যে, বাইরের কোম্পানি সব নিয়ে গেল!
সমালোচনার ক্ষেত্রে আরেকটু গঠনমূলক হলে আমাদের সবারই মনেহয় উপকার হত। অন্তত আমার তো কিছুটা জ্ঞান বাড়তো। সবার কাছেই অনুরোধ, দয়া করে এমন কিছু না করাই ভাল যা আমাদের সাময়িক বিনোদন দেবে হয়তো কিন্তু বড় ক্যানভাসে আবার দেখলে দেখা যাবে এই সমালোচনাই বড় কোনো ক্ষতির কারণ হয়ে গেছে।
আলোচনার শেষ যে বিষয়টি তুলে আনতে চাই তা হল, যে সকল টেকনোলজি কোম্পানি ২০ জনের অধিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে তাদের ব্যাপারে একটা নীতিমালা থাকা জরুরী।
সুদূর প্রবাসে বসে আমার একটাই আশা সংশ্লিষ্টরা বিষয়গুলোতে নজর দেবে।
লেখক: নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশী
সংবাদ নিয়ে আলোচনা